হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।

ইবনে হিশাম (র)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

সীরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ রাসূল চরিত রচনায় ইবন হিশাম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি জগতে অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব। সীরাতগ্রন্থ হিসাবে দু’টি গ্রন্থ সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করে। প্রথমটি হলো ৮৫ হিজরীতে মদীনা তায়্যিবায় জন্মগ্রহণকারী ইবন ইসহাক রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর ‘সীরাতুর-রাসূলুল্লাহ্ (সা)’, অপরটি হল ইন্ন হিশাম (র)-এর ‘সীরাতুন্নবী (সা)’।

‘আস-সীরাতুন নববিয়াহ’ একক গ্রন্থ হিসাবে পরবর্তীতে সংরক্ষিত হয়নি। ইবন হিশাম (র) ‘আস্-সীরাতুন্-নববিয়্যাহ্’র সেসব অংশ বর্জন করেছেন, যেসব বর্ণনা সরাসরি হযরত নবী করীম (সা)-এর জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক বলে প্রমাণিত হয়নি। ইবন হিশাম (র)-এর বর্জিত অংশগুলো তাবারী (র) ও আযরাকীর লেখায় সংরক্ষিত হয়েছে।

ইবন হিশাম (র)-এর নাম ও বংশ পরিচয়

নাম আবদুল মালিক, উপনাম আবূ মুহাম্মদ। পিতার নাম হিশাম। দাদার নাম আইউব, হিমইয়ারী বংশের মুআফিরী শাখায় তাঁর জন্ম। তাঁর জন্ম বসরাতে কিন্তু বংশের সবাই মিসরে বাস করেনবিধায় তিনি বাল্যকালেই সেখানে চলে যান। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি সেখানেই অতিবাহিত করেন। তাঁর জন্ম তারিখ অজ্ঞাত। মতান্তরে তিনি আদনান বংশের সন্তান।

শিক্ষাদীক্ষা ও সীরাত রচনা

তাঁর শিক্ষাদীক্ষা সম্বন্ধে এতটুকু যথেষ্ট যে, তিনি মিসরে ইমাম শাফিঈ রাহমতুল্লাহ্ আলায়হি-এর সান্নিধ্য লাভ করেন। যমানার মুজাদ্দিদ, আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জমা’আতের অন্যতম ইমাম শাফিঈ রাহমাতুল্লাহি আলায়হির সাহচর্য তাঁর জন্য সৌভাগ্যের কারণ হয়েছে।

ইবন ইসহাক (র)-এর রচিত ‘সীরাতুর রাসূলুল্লাহ্’-র সংশোধনকারী হিসাবে ইব্‌ন হিশাম (র) জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তিনি ‘আস্-সীরাতুন্ নববিয়্যাহতে’ বর্ণিত কতিপয় কবিতার সঠিক পাঠ লিপিবদ্ধ করেন। নতুন কবিতা তাতে যোগ করেন। কঠিন শব্দ ও বিশেষ বিশেষ শব্দসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সংযোজন করেন এবং কোথাও কোথাও বংশ তালিকা সংশোধন করেন, অর্থাৎ গ্রন্থটির যা অপূর্ণতা ছিল, তিনি তা পূরণ করেন দেন। তাতে ইব্‌ন হিশাম (র)-এর সংস্করণের মাধ্যমে গ্রন্থটির জনপ্রিয়তা অধিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ‘আস্-সীরাতুন্ নববিয়্যাহ্’ গ্রন্থটি ভালভাবে পড়ার জন্য তিনি তৎকালীন কৃষ্ণা নিবাসী যিয়াদ বাকায়ী (মৃ. ১৮৩ হি./৭৯৯ খ্রি.)-এর নিকট ইরাকে গমন করেন।

ইবনুল-বরকী, যাহাবী, তাক্বিরাতুল্-হুফ্ফায, তাবাকাত ইত্যাদি গ্রন্থের বর্ণনামতে ইন্ন হিশাম (র)-এর অনবদ্য রচনা ‘আস্-সীরাতুন্ নববিয়‍্যাহ্’ এক অমর কীর্তি। পরবর্তীকালে সীরাতে রাসূলের উপর পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় যত গ্রন্থ রচিত হয়েছে, সবগুলো গ্রন্থেরই মূল ভিত্তি ইব্‌ন হিশাম (র)-এর অমর এ গ্রন্থ। ঐতিহাসিক ধারা বিবরণীর সাথে পবিত্র কুরআন নাযিলের ধারা বিবরণী এতে সন্নিবেশিত হওয়ায় এ গ্রন্থের মাহাত্ম্য অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েেেছ।

ইবন হিশাম (র)-এর অপ্রতিদ্বন্দ্বী এ গ্রন্থের কতিপয় ব্যাখ্যা জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। যেমন: (১) ইমাম সুহায়লীর-‘রাওযুল্-উনূফ, (২) আবূ যার খাশানীর-‘শারহুস-সীরাতুন্- নববিয়‍্যাহ, (৩) ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (র)-এর ‘কাশফুল-লিসাম ফী শারহি সীরাতে ইব্‌ন হিশাম।

এ অনন্য গ্রন্থের কতিপয় সংক্ষিপ্তসারও রচিত হয়েছে। যেমন: (১) বুরহানুদ্দীন ইবরাহীম ইবন মুহাম্মদ শাফিঈর-‘যাখীরাহ্ ফী মুখাতসারিস্-সীরাহ’, (২) আবুল আব্বাস আহমদ ইব্‌ন ইবরাহীম আল্-ওয়াসিতীর ‘মুখতাসার সীরাত ইব্‌ন হিশাম।’ (৩) আবদুস-সালাম হারূন-এর ‘তাহযীব সীরাত ইব্‌ন হিশাম।’

বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতা

ইব্‌ন হিশাম (র) যদিও ‘সীরাতুর-রাসূল’ বিশারদ হিসাবে জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিত্বের অধিকারী, তথাপিও তাঁর পাণ্ডিত্য শুধু সীরাত বর্ণনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি একাধারে হাদীসবেত্তা, বংশ-লতিকা বিশারদ, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, আরবী ব্যাকরণবিদ ও ভাষাবিজ্ঞানী হিসাবেও জগতে সমধিক খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছেন। কুলজী (বংশ লতিকা বিষয়ক) শাস্ত্র এবং আরবী ব্যাকরণে তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। হিমাইয়ার গোত্রের ইতিহাস ‘তারীখ সালাতীন হিমইয়ার’ এবং দক্ষিণ আরবীয় পুরাকীর্তিসমূহ সম্বন্ধে তাঁর রচিত ‘কিতাবুত-তীজান’ আজও তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্যের প্রমাণ হিসাবে সকল ঐতিহাসিকের নিকট সমাদৃত।

ওফাত

এ মহান ‘সীরাতুর-রাসূল’ বিশারদের জন্ম যেমন অজ্ঞাত, তেমনি তাঁর ওফাতের সঠিক তারিখও কোন ঐতিহাসিক বর্ণনায় পাওয়া যায় না। তবে একমতে বর্ণিত আছে, ১৩ রবীউস-সানী ২১৮ হিজরী, ‘মুতাবিক ৮ মে, ৮৩৩ খ্রি. সনে, মতান্তরে ২১ হিজরী মুতাবিক ৮২৮ খ্রি. সনে তিনি মিসরের ফুসতাত শহরে ওফাতপ্রাপ্ত হন। মিসর বিজয়ী বীর সেনানী হযরত আমর ইব্‌ আস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ‘ফুসতাত’ শহর স্থাপন করেন। বর্তমানে তা আধুনিক মিসরের রাজধানী কায়রোর উপকণ্ঠে অবস্থিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top