হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।

পবিত্র বংশধারা হযরত মুহাম্মদ (সা) থেকে হযরত আদম (আ) পর্যন্ত

পবিত্র বংশধারা হযরত মুহাম্মদ (সা) থেকে হযরত আদম (আ) পর্যন্ত

আবু মুহাম্মদ আবদুল মালিক ইব্‌ন হিশাম বলেন: এই গ্রন্থখানি হচ্ছে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিবের জীবন চরিত। আবদুল মুত্তালিবের প্রকৃত নাম শায়বা’ ইবন হাশিম। হাশিমের আসল নাম আমর ইব্‌ন আবদে মানাফ। আবদে মানাফের আসল নাম মুর্গীরা ইব্‌ন কুসাই ইব্‌ন কিলাব ইব্‌ন মুররা’

১. ইব্‌ন ইসহাকও বলেছেন যে, তাঁর নাম শায়বা এবং এটাই নির্ভুল বর্ণনা। তাঁর এই নাম রাখার কারণ এই যে, জন্মের সময়ই তাঁর মাথায় প্রাক্কা চুল পাওয়া গিয়েছিল। আবদুল মুত্তালিব ছাড়া অন্য যে সব আরব ব্যক্তির নাম শায়বা রাখা হয়েছে, তাদের নামের পেছনে রয়েছে বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তা লাভের শুভ কামনা। হারম (বৃদ্ধ) ও কবীর (প্রবীণ) শব্দ দিয়েও একই কারণে নামকরণ করা হয়ে থাকে। আবদুল মুত্তালিব ১৪০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি ছিলেন খ্যাতনামা কবি উবায়দ ইব্‌ন আব্বাসের সমসাময়িক। কথিত আছ: তিনিই চুলে প্রথম কালো কলপ ব্যবহার করেন। রওযুল ‘উনুফ’ গ্রন্থে তার আসল নাম আমের বলা হয়েছে।

২ আমর ধাতুগত দিক দিয়ে চারটি অর্থ বহন করে আয়ুষ্কাল, দাঁতের পাটি, জামার আস্তিনের একাংশ এবং কানের দুল।

৫ মুগীরা অর্থ শত্রুর ওপর প্রচণ্ডভাবে হামলাকারী, অথবা শক্তভাবে রশি দিয়ে বন্ধনকারী।

৪ কুসাই-এর আসল নাম যায়দ। কুসাই শব্দের ধাতুগত ও আভিধানিক অর্থ দূরবর্তী। তিনি তার মাতা ফাতিমার গর্ভে থাকা অবস্থায় তার পিতা রবিয়া ইব্‌ন হারাম তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠী থেকে দূরে কাযাআ নামক স্থানে চলে যান। ফলে তার নাম হয়েছে কুসাই।

৫. কিলাব শব্দটির আভিধানিক অথ দু’টি (১) কালব তথা কুকুরের বহুবচন। অর্থাৎ কুকুরগুলো, (২) পরস্পরকে আক্রমণ করা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করা। এ শব্দটি দ্বারা কোন মানুষ বা গোত্রের নামকরণ করার তাৎপর্য প্রথম অর্থের আলোকে এই দাঁড়ায় যে, আরবরা হয়তো সংখ্যাধিক্য ও বংশ বিস্তারকে বেশি

পসন্দ করতো। আর দ্বিতীয় অর্থের আলোকে তাৎপর্য এই যে, আরবরা যুদ্ধবাজ ও দাংগাবাজ মানুষ পসন্দ করে। কথিত আছে যে, আবু রুকাইশ আরাবীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনারা আপনাদের ছেলেদেরকে কাল্ব (কুকুর), যিব (বাঘ) ইত্যাকার নিকৃষ্টতম শব্দাবলী দিয়ে নামকরণ করেন, অথচ দাসদেরকে সুন্দর সুন্দর শব্দ দ্বারা নামকরণ করেন-যেমন মারযুক (সচ্ছল) এবং রাবাহ (লাভজনক)-এর কারণ: কি? আবু রুকাইশ জবাবে বলেন, আমরা আমাদের ছেলেদের নাম রাখি আমাদের শত্রুদের জন্য এবং দাসদের নাম রাখি নিজেদের জন্য, অর্থাৎ ছেলেরা শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র স্বরূপ এবং তাদের কলিজায় বিদ্ধ তাঁর স্বরূপ। এ জন্য তারা এ জাতীয় শব্দ দ্বারা তাদের নামকরণ করে থাকে।

• মুররা শব্দের শাব্দিক অর্থ অতিশয় তিক্ত। মূল শব্দ মুরুরুন অর্থ তিক্ত। কারো কারো মতে মুররা এক ধরনের তরকারি যা মাটির নীচ থেকে তুলে তেল ও ভিনেগার দিয়ে খাওয়া হয়।

ইব্‌ন কা’ব’ ইব্‌ন লুআঈ’ ইব্‌ন গালিব, ইব্‌ন ফিহর ইবন মালিক ইব্‌ নাযর ইব্‌ন কিনানা, ইব্‌ন খুযায়মা ইব্‌ন মুদরিকা। মুদরিকার আসল নাম আমির ইব্‌ন ইলয়াস’ ইব্‌ন মুযার ইব্‌ন নিযার’ ইব্‌ন মায়াদ’ ইব্‌ন আদনান ইব্‌ন উদ্‌’ মতান্তরে উদাদ ইব্‌ন মুকাওয়াম, ইব্‌ন নাহুর” ইব্‌ন তায়রা ১২ ইব্‌ন ইয়ারুব ইবন ইয়াশজুব” ইব্‌ন নাবিত ইব্‌ন ইসমাঈল ইব্‌ ইবরাহীম ইব্‌ন তারেহ বা আযার ইব্‌ নাহুর” ইব্‌ন সারূগ, ইব্‌ন রাউ ইব্‌ন ফালিখ

১. কা’ব শব্দটির ধাতুগত অর্থ দৃঢ়তা ও স্থিতি। পায়ের রগকে আরবীতে কা’ব বলা হয়। আরবী প্রবাদ রয়েছে ثبت تهرك الكعب অর্থাৎ পায়ের গিয়ার মত শক্ত ও স্থিতিশীল। রাসূল (সা)-এর এই পূর্ব পুরুষ কা’বই হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি প্রথম আরব ঐক্যের ডাক দেন। তার পরে ইসলামের অভ্যুদয় না হওয়া পর্যন্ত আৱৰ কথাটা আর উচ্চারিত হয়নি। কারো কারো মতে, সপ্তাহের একটি দিনকে জুমুআ নামে অভিহিত করার প্রথম উদ্যোগ তিনি নেন। এই দিনে তিনি কুরায়শদের একত্রিত করতেন এবং তাদের সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের আগমনের কথা আলোচনা করতেন। তিনি তাদের জানাতেন যে, মুহাম্মদ (সা) তাঁর সন্তান এবং তিনি তাদের অনুসরণের নির্দেশ দিতেন।

২ লুআঈ: আভিধানিক অর্থ বুনো ষাঁড়।

৩. ফিহর: আভিধানিক অর্থে লম্বা আকৃতির পাথর। কারো কারো মতে, এটা তার উপাধি। আসল নাম কুরায়শ। আবার কেউ কেউ বলেন: ফিহর-তার আসল নাম এবং কুরায়শ উপাধি।

৪. খুযায়মা শব্দটি খাযমা থেকে নির্গত। খায্যা শব্দের অর্থ কোন জিনিসকে শক্ত করে বাঁধা ও মেরামত করা প্রতিবার বাঁধাকে বলা হয়-খুযায়মা।

৫. যা আম্বারীর মতে এটি নবী ইলয়াস (আ)-এর নামের মতই একটি নাম। অন্যদের মতে ইলয়াস অর্থ এমন বীর, যিনি কখনো যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করেন না। কবি আজ্জাজের কবিতায়। এর প্রয়োগ এ

অর্থেই হয়েছে। যেমন: اليس عن حوبائه سخى আম্বারী ছাড়া অন্যদের মতে, এটি ইয়াস থেকে উৎপন্ন যার অর্থ হতাশা।

৬ মূল মাযীরা থেকে নির্গত, যা দুধের তৈরি এক রকম খাদ্যকে বলা হয়।

৭. শাব্দিক অর্থ অল্প। এ ব্যক্তির জন্মের সময় তার দুই চোখের মাঝখানে নবুওয়াতের জ্যোতি দেখে তার পিতা কুরবানী ও লোকদের খাওয়ানোর আয়োজন করেছিল।

৮. মায়াদ অর্থ শক্তিমান।

৯ আদন অর্থ চিরস্থায়ী থেকেই আদনান।

১০. উদ রা উদাদের শাব্দিক অর্থ স্নেহ-মমতা ও ভালবাসা।

১১. নাইর অর্থ কুরবানীদাতা।।

১২. তায়রা অর্থ দুঃখ ভারাক্রান্ত।

১৩. ইয়াশজুব অর্থ নিন্দুক।

১৪. ইসমাঈল শব্দের আভিধানিক অর্থ আল্লাহর অনুগত।

১৫. ইবরাহীম শব্দটির মূল আকৃতি ছিল আবুন রাহীম )آب راحم( অর্থাৎ দয়ালু পিতা।

১৬. কেউ কেউ বলেন: এর অর্থ হে খোঁড়া ব্যক্তি।

১৭. নাহুর অর্থ কুরবানীদাতা।

১৮. মতান্তরে ফালিগ।

ইব্‌ন আয়বার’ ইব্‌ন শালেখ’ ইব্‌ন আরফাখশায ইবন সাম, ইব্‌ নূহ ইব্‌ন লামকি, ইন্ন মাতু শালাখ’ ইব্‌ন আখনুখ। ইনি নবী হযরত ইদ্রীস (আ) বলে অনেকের ধারণা। আদম সন্তানদের মধ্যে তিনিই প্রথম নবুওয়ত পান এবং কলম দিয়ে লেখার সূচনা করেন। ইদ্রীসের পিতা ইয়ারদ *ইব্‌ন মাহলীল ‘ইব্‌ন কায়নান ইবন ইয়ানিশ ইন্ন শীস ইবন আদম (আ)

• আবূ মুহাম্মদ আবদুল মালিক ইবন হিশাম বলেন, যিয়াদ ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ বুক্কায়ী মুহাম্মদ ইবন ইসহাক মুত্তালিবীর’ বরাতে উপরোক্ত বংশনামা মুহাম্মদ (সা) থেকে আদম (আ) পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। কিন্তু খাল্লাদ ইব্‌ন কুররা ইন্ন খালিদ সাদৃসী শায়বান ইবন যুহায়র ইব্র শাকীক ইব্‌ন সাওর থেকে এবং শায়বান কাতাদা ইব্‌ন দিআমা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইসমাঈল থেকে আদম (আ) পর্যন্ত বংশ তালিকা এরূপ:

ইসমাঈল ইব্‌ন ইবরাহীম ইরুন তারেহ (বা আযর) ইবন নাহুর ইব্‌ন আসরাগ ইব্‌ন আরগু ইব্‌ন ফালিখ ইব্‌ন আবির ইব্‌ন শালিখ ইব্‌ন আরফাখশায ইব্‌ন সাম ইব্‌ নূহ ইব্‌ন লামাক ইব্‌ন মাতুশালাখ ইব্‌ন আখনুক ইব্‌ন ইয়ারদ ইব্‌ন মাহলাঈল ইব্‌ন কায়িন ইব্‌ন আনুশ ইন শীস ইব্রক্স আদম (আ)।

১. মতান্তরে আবাবর। তাবারীর মতে ফালিগ ও আবিরের মাঝখানে “কায়আন’ নামক আরেক পুরুষ ছিলেন। তবে তিনি জাদুকর ছিলেন বলে তাওরাতে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে।

২ শালেখ অর্থ দূত অথবা প্রতিনিধি।

৩. এর অর্থ জ্বলন্ত প্রদীপ।

৪. নূহের আসল নাম আবদুল গাফ্ফার। নূহ শব্দের অর্থ কান্না। অনেকে বলেন, নূহ (আ) তাঁর ভুল-ত্রুটির কারণে অধিক কাঁদতেন বলে তাঁর এরূপ নামকরণ হয়েছে।

৫. মাকু শালাখ-এর শাব্দিক অর্থ ‘দূত মারা গেছে’। তাঁর পিতা একজন দূত ছিলেন এবং এ ব্যক্তি মাতৃ-উদরে থাকতেই তাঁর পিতা মারা যান।

৬ এর অর্থ নিয়ন্ত্রক।

৭. এর অর্থ প্রশংসিত। কারো কারো মতে মাহলাইল।

কায়নান অর্থ সমান।

৯ ইয়ানিশ অর্থ সত্যবাদী।

১০. শীস সুরিয়ানী শব্দ, এর অর্থ আল্লাহর দান।

১১. আদম শব্দের ব্যাখ্যা নিয়ে তিন রকম মত রয়েছে। কেউ বলেন: এটি স্যুরয়ানী শব্দ এবং এর অর্থ -অজ্ঞাত। কেউ বলেন, এটি আরবী শব্দ এবং এর অর্থ বাদামী বর্ণবিশিষ্ট। কেউ বলেন, এর মূল ধাতু আদিম অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠ। তিনি ভূ-পৃষ্ঠের মাটি থেকে তৈরি বলে এরূপ নামকরণ হয়েছে।

১২. ইনি কূফার প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ছিলেন। পূর্ণ নাম আবূ মুহাম্মদ যিয়াদ ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ বুঝায়ী।

১৩. পূর্ণ নাম আবূ বকর মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক ইব্‌ন ইয়াসার। বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ। বিশেষত রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবনী ও যুদ্ধ-বিগ্রহ বিষয়ের অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি বাঁগদাদে ১৫১ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। এই গ্রন্থের ভূমিকায় তাঁর ও ইব্‌ন হিশামের বিস্তারিত বৃত্তান্ত দেখুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top